Skip to main content

khorasan

রাজ্যটির নাম খোরাসন, আফগান রাজ্যের গা ঘেষে।জনসংখ্যা কম, মানুষ শান্তিপ্রিয়। চেঙ্গিস খাঁ এসে দেশটিকে লন্ডভন্ড করে দেন।তৈমুর লঙ এসেও রক্তের ফোয়ারা ছুটিয়ে দেন।পরে পারস্যের শাহ, একজন প্রাদেশিক কর্তা,সুলতান বেগী, মাধ্যমে এই দেশটি শাসন করতেন।সুলতানের এক সুযোগ্য উজীর ছিলেন। নাম মহম্মদ শরীফ। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষটি দেশটাকে ভালোবাসতেন।দেশবাসীর মধ্যে দুটি ভাগ, কুর্দিস ও তুর্কী। উভয়েই গোলমালের উৎস। উজীর সফলভাবে, তার মোকাবিলা করে, উপাধী পেয়েছেন, উজীরে আজম।তার সম্পদ সুলতানেরই মত, বিশাল প্রাসাদ, আস্তাবলে প্রচুর প্রানী,লোক, লস্কর। উজীরের ছেলে মির্জা গিয়াস শিকার করে, আনন্দ স্ফুর্তি করেই কাটিয়ে দেয়। এমন সুপুরুষ যুবক খুব কম দেখা যায়।তুর্কী সরদার মুস্তাক খাঁ ছিলেন বেনিয়া। গালিচা থেকে রত্ন, সবই কেনা বেচা করেন। তিনি উজীরের অন্দর মহলে প্রবেশের অনুমতি পেতেন।তার মুখ থেকেই খবরটা ছড়ালো যে উজীর মহম্মদ শরীফের বাড়ীটি রুপের হাট। সবাই অত্যন্ত সুপুরুষ আর মহিলারা অসাধারন সুন্দরী।সুলতান বেগী হঠাৎ মারা গেলেন। তার মৃত্যুর পর সুলতান হলেন কাজাক খাঁ। তিনি বেগীর মতই উজীর মহম্মদ শরীফকে মান্যতা দিতেন। এরপর হঠাৎ করেই কাজাক খাঁ ও মহম্মদ শরীফ মারা গেলে, রাজ্যটা অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্য হয়ে উঠলো।সবচেয়ে বেশী বিপদে পড়লেন উজীর মহম্মদ শরীফের পরিবারের লোকজনেরা। একেই তো তিনি বিত্তবান, সুলতান না হয়েও আভিজাত্য সুলতানের মত। তার উপর তার বাড়ীর লোকজনদের রুপ।মহম্মদ শরীফের এক মাত্র পুত্র মীর্জা গিয়াস বেগ খুব বিপদে পড়লেন। তার কুটনৈতিক বুদ্ধি, তার বাবার ধারে কাছেও নয়।অপরাধীরা বার বার তার প্রাসাদ আক্রমন করলো। আস্তাবল থেকে বেশ কিছু ভালো জাতের ঘোড়া চুরি গেলো।এই আতঙ্কে তার মা মারা গেলেন। অথচ তার মারা যাবার বয়স হয়নি।একদিন কুর্দিস লুঠেরার দল তার প্রাসাদ আক্রমন করে দামী জিনিসপত্র সোনা দানা তো বটেই, এমন কি দামী গালিচা পর্য্যন্ত লুঠ করলো।আস্তাবল থেকে ঘোড়া, উট, খচ্চর খোয়াগেলো।সুলতানের সেনাবাহিনীর কিছু সেনাপতি দস্যুদলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।মির্জাগিয়াস বেগ পরদিন নবাবের প্রাসাদে চললেন, খোঁজ নিতে।পথে এক পরিচিত সেনাপতির সঙ্গে দেখা। সেই সেনাপতি জানালেন, বিস্তর গোলমাল,সুলতানেের প্রাসাদের আর অবশিষ্ট কিছু নেই। শহরের ভদ্রলোকেরা দলে দলে চলে যাচ্ছে, শান্তির দেশ, সম্বৃদ্ধির দেশ, সেই হিন্দুস্তানে। সেখানে মূঘল বাদশারা দেশে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাজত্ব করছেন।মীর্জা গিয়াস কোনদিন রাজধানি ছেড়ে বাইরে যাননি। কিছুই চেনেন না। তিনি গিয়ে ধরলেন সওদাগর মুস্তাক খা্ঁনের পুত্র সওদাগর মাসুদকে। সওদাগর বহু দেশ ঘুরে বেড়ানো মানুষ। পথঘাট সবই চেনেন।তিনি শীঘ্রই যাবেন হিন্দুস্তানের রাজধানী দিল্লীর পথে। কিন্তু মীর্জা গিয়াসের পক্ষে সেই মুহুর্তে দুরদেশে যাওয়া সম্ভব নয়। কারন তাঁর স্ত্রী আর কয়েক দিনের মধ্যেই সন্তান প্রসব করবেন। সওদাগর মাসুদ জানালেন, কথায় আছে, দিল্লী দুর অস্ত। আপনি একা যেতে পারবেন না। আমার দলের সঙ্গে চলুন।নিরাপদে যাবেন। পথে দস্যু তস্কর ছাড়াও পাহাড়ি হিংস্র জন্তু জানোয়ারের অভাব নেই।অগত্যা মীর্জা গিয়াস তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে চল্লেন হিন্দুস্তানের পথে। সঙ্গে কিছু দামী জহরত, যা দিয়ে হিন্দুস্তানে কিছু কারবার শুরু করবেন, বলে ঠিক করেছেন। প্রথম ক দিন কোন অসুবিধার কথা নয়। হয়ও নি। তারপর শুরু হলো।পাহাড়ী দূর্গম রাস্তা। মীর্জা গিয়াসের স্ত্রী যে খচ্চরের পিঠে যাচ্ছিলেন, একটি বাঁকের মুখে একটি পাহাড়ী চতুষ্পদ, খচ্চরটির গলা কামড়ে ধরে তীব্র গতিতে পাহাড় বেয়ে উঠে গেলো। বিবি ছিটকে পড়লেন বটে, কিন্তু একটি ঝোপের উপর পড়ায়, খুব একটা আহত হলেন না।এইসব যাত্রার নিয়ম হলো, কেউ কারুর জন্য অপেক্ষা করেনা।কারন বহুদিনের হাটাপথ। সারি সারি মানুষ। কেউ ঘোড়ায়, কেউ খচ্চরে, কেউ পয়দল। শুধু যে সামনে যা পিছন থেকে আক্রমনের ভয়, তা নয়। দুদিক থেকেও আক্রমন হতে পারে।এবার মীর্জা গিয়াস পড়লেন বিপদে। অসুস্হ বেগমকে নিজের খচ্চরে বসিয়ে, নিজে পয়দল। ধনী পিতার সন্তান সে। এত কষ্ট কল্পনার অতীত।একদিন মাসুদ তাঁকে বল্লেন, মীর্জা সায়েব, আপনাকে চলার গতি বাড়াতে হবে। পাহারের উপর থেকে ডাকাতরা আমাদের উপর নজর রাখছে।মাসুদ অভিজ্ঞ মানুষ। এ পথে যাতায়াত করে অভ্যস্হ। তার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেলো। হঠাৎ পাহারের উপর থেকে একটি লোক, মুহুর্তে নেমে মীর্জার পোটলা পুটলি টান মেরে বেশীর ভাগটাই ছিনিয়ে নিয়ে কেউ কিছু বোঝার আগেই পাহার বেয়ে উঠে গেলো।পরদিন মীর্জা গিয়াস আবিস্কার করলেন, মাসুদ বেশ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন।হিন্দুস্তান তখনও সাত দিনের পথ।এমন সময়ে মীর্জা গিয়াসের বিবির প্রসব যন্ত্রনা উঠলো। রাস্তার পাশেই একটু খড় কুটো দিয়ে মীর্জা গিয়াস আতুড়ঘর করলেন। এই সময়ে কোন পাহাড়ী মাংসাশী প্রানী এলে, অনায়াসে কিছু খাদ্য পেয়ে যেত। কিন্তু ঈশ্বরের এই দুনিয়ায় জন্তু জানোয়ারেরাও একটা নিয়ম মেনে চলে। কেউ অসহায় এই দম্পতিকে আক্রমনে গেলোনা।বিবি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। ঐ শিশুটির গায়ের রং বা রুপের বর্ননা দেওয়ার মত ভাষা, বিশ্বে সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ঐ পথে সময় নষ্ট করার সময় নেই। ঐ শিশুকে নিয়ে বিবি উঠলেন খচ্চরের পিঠে। মীর্জা গিয়াস পয়দলে। কোনক্রমে সাত দিনের কষ্ট সহ্য করে ঐ শিশুকন্যাটিকে নিয়ে মীর্জা গিয়াস পৌছলেন দিল্লীতে।ঐ শিশু টিই পরবর্তী কালে প্রথম মহিলা, যার ছবি মুদ্রায় দেখা যেতো।হ্যা, ভারত সম্রাজ্ঞী নুরজাহান।

Comments

Popular posts from this blog

Rumpa bidroho

রুম্পা বিদ্রোহদক্ষিণ ভারতের গোদাবরী অঞ্চলের রুম্পা আদিবাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ(১৮৭৮-১৮৮০)উনবিংশ শতকের সপ্তম দশকে মাদ্রাজ প্রদেশ জুড়ে প্রবল দুর্ভিক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষ প্রান হারান। ১৮৭৬ এর ২৩ শে নভেম্বর অমৃত বাজার পত্রিকা এই দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে বৃটিশ শাসকের শোষন, উদাসীনতাকে দায়ী করেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতাবাসীর কাছে দুর্ভিক্ষপীড়িতমানুষদের সাহায্যার্থে অর্থদানের আবেদন করলেও বিশেষ সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ভেতরেই উপুর্যপরি শোষন, বনাঞ্চল সংক্রান্ত বাধানিষেধ ও করের বোঝা দক্ষিণ ভারতে পর্বত-অরন্যচারীরুম্পা আদিবাসীদের ভেতর তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।রুম্পা সম্প্রদায় ছিল গোষ্ঠীমূলক। সমাজে সব কাজই একত্রিত সিদ্ধান্তে হতো। সুতরাং সকলেই মিলিতভাবে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়। এদের প্রধান নেতা ছিলেন চান্দ্রিয়া। লিংগম রেড্ডি, থুমন ধোরা প্রমুখ অন্যান্য নেতারাও বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। তারা থানা আক্রমন, অগ্নিসংযোগ, সরকারী কর্মচারীদের হত্যা ও ভদ্রাচলম, বিশাখাপত্তনম তথা পূর্ব গোদাবরী অঞ্চলে নিজেদের অধিকার কায়েম করলে সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর সাথে খন্ডযুদ্ধ হয়, উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র ও স...

Rajput history

ইতিহাসের পথ ধরে চলুন ফিরে যাই ১৭৩০ সালে। পশ্চিম রাজস্থানের মাড়োয়াড় অঞ্চলের খেজার্লি গ্রামে। আমরা ইতিহাসে পড়েছি চিরকালই রাজস্থান বিখ্যাত ছিল যুদ্ধবিগ্রহ, দখল ও রক্তপাতের জন্য। কিন্তু যেটা ইতিহাসে নেই তা হল প্রকৃতি ও জীবজগৎ বাঁচিয়ে নিজেরা বেঁচে থাকার এক জীবনদর্শনও শিখিয়েছে জলহীন এই রাজপুতনা। এই হিংসার দুনিয়ায় একটি ব্যতিক্রমের মতো রয়েছে বিষ্ণোই সম্প্রদায় যারা আজও প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে বাঁচায় বিশ্বাসী। লুন্ঠন, কেড়ে খাওয়া বা ফসলের জন্য রাজ্যবিস্তারের পরম্পরার উল্টোপথে হেঁটে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে নিজেরা বাঁচার দর্শনে বিশ্বাস করাবিষ্ণোই সম্প্রদায় গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংসের পথে বোধহয় পৃথিবীতে প্রথমবার (ভারতে তো বটেই) রুখে দাঁড়িয়েছিল।আগে দেখে নেওয়া যাক কারা এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। কথিত আছে, রাজস্থানের পিপাসার গ্রামে ১৪৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাম্বেশ্বর নামে এক ব্যক্তি। তিনিই পরবর্তীকাল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। বিষ্ণুর উপাসনা করতেন জাম্বেশ্বর। যে কারণে সম্প্রদায়ের নাম হয় বিষ্ণোই।গুরু জাম্বেশ্বর তার ভক্তদের বলেছিলেন, প্রকৃতিকে বাঁচানোর কথা। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে যে পশু-পাখি-গাছপালারও প্...

Gilgamas

পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেস সুমেরিও সভ্যতায় গড়ে ওঠা সমাজে,আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে,এক অনামি কবির হাতে কিউনিফর্ম ভাষায় রচিত হয় গিলগামেস মহাকাব্য। যেকোন মহাকাব্যই একটি সমাজ জীবনের পরিপ্রক্ষিতে রচিত হয়েছে। বহু বছর ধরে কাহিনীগুলি মানুষের মুখে মুখে বাহিত হতে থাকে। লিখিত আকারের মধ্যেও এর মূল চরিত্রগুলি এক থাকলেও,সময়ভেদে এবং অন্চলভেদে কাহিনীর মধ্যে কিছু কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যদিও মূল কাঠামোর কোন পরিবর্তন হয় না। যে সমাজকে কেন্দ্র করে কাহিনী গড়ে ওঠে, তার স্বরূপটি খুঁজে পেতে তাই অসুবিধা হয় না। গিলগামেসের কাহিনীও ঠিক এরকমই একটি।সর্বপ্রথম ব্রিটিস মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে অস্টিন হেনরি লেয়ার্ড, ১৮৫০ সাল নাগাদ, বর্তমান ইরাকে খনন কার্য চালিয়ে প্রাচীন সুমেরিও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার করেন। তিনি কিউনিফর্ম ভাষায় লিখিত প্রায় ২০,০০০ মাটির ট্যাবলেট বা টালি ব্রিটিস মিউজিয়ামে পাঠান। শুরু হয় অ্যাসিরিওলজির উপর গবেষনা। কিউনিফর্মভাষার পাঠোদ্ধারের কাজ। পরে আরো অনেক উৎস থেকে প্রায় ৭৫,০০০ এই ধরনের ট্যাবলেট ম্যানিস্ক্রিপ্টউদ্ধার হয়। যার মধ্যে অনেকগুলিই ভাঙা-চোরা। কিউনিফর্ম ভাষা পড়তে পারে হাতে ...