ইতিহাসের পথ ধরে চলুন ফিরে যাই ১৭৩০ সালে। পশ্চিম রাজস্থানের মাড়োয়াড় অঞ্চলের খেজার্লি গ্রামে। আমরা ইতিহাসে পড়েছি চিরকালই রাজস্থান বিখ্যাত ছিল যুদ্ধবিগ্রহ, দখল ও রক্তপাতের জন্য। কিন্তু যেটা ইতিহাসে নেই তা হল প্রকৃতি ও জীবজগৎ বাঁচিয়ে নিজেরা বেঁচে থাকার এক জীবনদর্শনও শিখিয়েছে জলহীন এই রাজপুতনা। এই হিংসার দুনিয়ায় একটি ব্যতিক্রমের মতো রয়েছে বিষ্ণোই সম্প্রদায় যারা আজও প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে বাঁচায় বিশ্বাসী। লুন্ঠন, কেড়ে খাওয়া বা ফসলের জন্য রাজ্যবিস্তারের পরম্পরার উল্টোপথে হেঁটে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে নিজেরা বাঁচার দর্শনে বিশ্বাস করাবিষ্ণোই সম্প্রদায় গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংসের পথে বোধহয় পৃথিবীতে প্রথমবার (ভারতে তো বটেই) রুখে দাঁড়িয়েছিল।আগে দেখে নেওয়া যাক কারা এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। কথিত আছে, রাজস্থানের পিপাসার গ্রামে ১৪৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাম্বেশ্বর নামে এক ব্যক্তি। তিনিই পরবর্তীকাল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। বিষ্ণুর উপাসনা করতেন জাম্বেশ্বর। যে কারণে সম্প্রদায়ের নাম হয় বিষ্ণোই।গুরু জাম্বেশ্বর তার ভক্তদের বলেছিলেন, প্রকৃতিকে বাঁচানোর কথা। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে যে পশু-পাখি-গাছপালারও প্রয়োজন রয়েছে, সেটাই ছিল তার মূল বক্তব্য।মোট ২৯টি নিয়মের কথা বলে গিয়েছিলেন গুরু জাম্বেশ্বর। যার প্রথম কটিতে বলা হয়েছে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার কথা। কারো কারো মতে, গুরু জাম্বেশ্বরের এই ২৯টি নিয়মাবলীর জন্যই সম্প্রদায়ের নাম হয়েছে বিষ্ণোই; কেননা তাতে রয়েছে বিশ এবং নয় থেকে।এবার আসা যাক মুল প্রসঙ্গে। বিষ্ণোই সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার পর প্রায় তিনশো বছর অতিক্রান্ত। এল ১৭৩০ সাল। মোগল শাসন পার করে ক্রমেই ব্রিটিশের সাম্রাজ্য বিস্তার হচ্ছে। মাড়োয়ার তথা যোধপুরের সিংহাসনে সদ্য অাসীন রাজা রাজপুত অভয় সিং। প্রাসাদ আর ইমারতের রাজপুতনায় নতুন কেল্লা বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। প্রয়োজন হল প্রচুর কাঠের। মন্ত্রী গিরিধরের নেতৃত্বে যোধপুর রাজার সৈন্যরা চলল ২৬ কিমি দূরে বিষ্ণোইদের খেজার্লি গ্রামে। এখানকার শক্তপোক্ত খেজরি গাছ এনে বানানো হবে কেল্লা। নামমাত্র জলে জন্মানো খেজরি গাছ মরুদেশে ছায়ার সঙ্গে জুটিয়ে দেয় বিনস জাতীয় একরকমের ফল, যা কিনা স্থানীয় মানুষ ও পশুর আহার।শুরু হল নির্বিচারে বৃক্ষছেদন। কিন্তু প্রবল বাধার মুখে পড়ল রাজসৈন্যরা। টানা ১০ দিন রাজপুত সেনার সামনে অস্ত্রহীন প্রতিরোধে সামিল হল ৮৩টি বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের গ্রাম।নতুন কেল্লা বানানোর জন্য কাঠ আনবার চেষ্টা বিফলে যাওয়ায় অজয় সিংয়ের ক্রোধ বেড়ে গেল। আদেশ দিলেন যে কোনোমূল্যে গাছ কেটে আনবার। অমৃতা দেবী ছিলেন একজন মাঝবয়সী বিষ্ণোই রমণী। পরদিন সকালে রাজপুত সৈন্যদের আসতে দেখে আক্ষরিক অর্থেই গাছ জড়িয়ে ধরলেন অমৃতাদেবী। সঙ্গে তাঁর তিন মেয়ে। জীবন তুচ্ছ করে গাছ আগলে অমৃতা দেবী নাকি বলেছিলেন - "সর সান্তে রুখ রহে তো ভি সস্তা জান।" এর মানে হল, মানুষের মাথার চেয়ে ঢের মূল্যবান একটি গাছ। সরাসরি সৈন্যদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন অমৃতা দেবী - গাছ কাটতে হলে তাঁদেরও কেটে ফেলতে হবে। নাছোর মা ও মেয়েদের মতই ধীরে ধীরে গাছ জড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষজন।এরপর যেটা হল তা হচ্ছে রাজপুত ইতিহাসের এক লজ্জাজনক অধ্যায়। রাজক্রোধে সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরস্ত্র বিষ্ণোইদের উপর। নির্বিচারে শুরু হল হত্যালীলা। মানুষ এবং খেজরি গাছের। সেদিন মাড়োয়ার রাজ্যের রাজপুত ক্রোধের বলি হয় ৩৬৩ জন প্রকৃতিপ্রেমী বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ।পরবর্তীকালে, এমনই গাছ বাঁচাও আন্দোলন হয় ভারতের উত্তরাখণ্ডে, যা চিপকো আন্দোলন নামে পরিচিত।স্বাধীনতার পরে অমৃতা দেবীর নেতৃত্বে শহিদ হওয়া বিষ্ণোইদের স্মৃতিতে খেজার্লিতে স্মৃতিসৌধ গড়ে ওঠে। রাজস্হান ও মধ্যপ্রদেশের বন-দফতর অমৃতা দেবীর নামে 'অমৃতা দেবী বিষ্ণোই স্মৃতি পুরস্কার' চালু করে।তবে দুঃখটা কি জানেন? বাস্তবের অমৃতা বিষ্ণোই নয়, রাজস্থানের রাজপুত তথা হিন্দু-স্বাভিমানের আইকন হন কল্পকাহিনীর পদ্মাবতী। আর উন্নয়নের আগ্রাসনে ক্রমেই ধুসর হয়ে যেতে থাকে অমৃতার স্মৃতি।
রুম্পা বিদ্রোহদক্ষিণ ভারতের গোদাবরী অঞ্চলের রুম্পা আদিবাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ(১৮৭৮-১৮৮০)উনবিংশ শতকের সপ্তম দশকে মাদ্রাজ প্রদেশ জুড়ে প্রবল দুর্ভিক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষ প্রান হারান। ১৮৭৬ এর ২৩ শে নভেম্বর অমৃত বাজার পত্রিকা এই দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে বৃটিশ শাসকের শোষন, উদাসীনতাকে দায়ী করেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতাবাসীর কাছে দুর্ভিক্ষপীড়িতমানুষদের সাহায্যার্থে অর্থদানের আবেদন করলেও বিশেষ সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ভেতরেই উপুর্যপরি শোষন, বনাঞ্চল সংক্রান্ত বাধানিষেধ ও করের বোঝা দক্ষিণ ভারতে পর্বত-অরন্যচারীরুম্পা আদিবাসীদের ভেতর তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।রুম্পা সম্প্রদায় ছিল গোষ্ঠীমূলক। সমাজে সব কাজই একত্রিত সিদ্ধান্তে হতো। সুতরাং সকলেই মিলিতভাবে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়। এদের প্রধান নেতা ছিলেন চান্দ্রিয়া। লিংগম রেড্ডি, থুমন ধোরা প্রমুখ অন্যান্য নেতারাও বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। তারা থানা আক্রমন, অগ্নিসংযোগ, সরকারী কর্মচারীদের হত্যা ও ভদ্রাচলম, বিশাখাপত্তনম তথা পূর্ব গোদাবরী অঞ্চলে নিজেদের অধিকার কায়েম করলে সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর সাথে খন্ডযুদ্ধ হয়, উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র ও স...
Comments
Post a Comment