Skip to main content

Fakir-Sannyasi rebellion

ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহসন্ন্যাসী বিদ্রোহ বলতে মূলত আঠারো শতকের শেষের দিকে (১৭৬০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) ভারতবর্ষের বাংলাতে সন্ন্যাসী ও ফকির বা মুসলিম ও হিন্দু তাপসদের তত্কালীন ব্রিটিশ শাসন বিরোধী আন্দোলনকে বোঝানো হয়েথাকে। ঐতিহাসিক এ আন্দোলন ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নামেও পরিচিত। ইতিহাসবিদগণ বিদ্রোহটির পটভূমি নিয়েই শুধু দ্বিধা বিভক্তই নন, বরং ভারতবর্ষের ইতিহাসে এর গুরুত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা মতদ্বৈত্বতা লক্ষণীয়। কেউ কেউ একে বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকার বলে মনে করেন যেহেতু ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর খাজনা উত্তোলনের কতৃত্ব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া হয়, আবার কারো কারো মতে এটি ১৭৭০ এর দুর্ভিক্ষোত্তর বাংলায় কিছু দস্যুর উন্মত্ততা ছাড়া কিছুই না।পটভূমিঅন্তত তিনটি আলাদা ঘটনাকে সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নামে অভিহিত করা হয়। যার একটি মূলত সম্মিলিত হিন্দু সন্ন্যাসী ও মুসলিম মাদারী এবং ধার্মিক ফকিরদের বৃহত্ গোষ্ঠী যারা পবিত্রস্থান দর্শনের উদ্দেশ্যে উত্তর ভারত থেকে বাংলার বিভিন্নস্থান ভ্রমণ করতেন। যাওয়ার পথে এসব সন্ন্যাসীগণ গোত্রপ্রধাণ,জমিদার অথবা ভূস্বামীদের কাছ থেকে ধর্মীয় অনুদান গ্রহণ করতেন যা তখন রেওয়াজ হিসেবে প্রচলিত ছিল। সমৃদ্ধির সময়ে গোত্রপ্রধাণ, জমিদারগণও এসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদার ও অনুগত ছিলেন কিন্তু যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দেওয়ানী ক্ষমতা লাভ করে তখন থেকে করের পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় ফলে স্থানীয় ভূস্বামী ও গোত্রপ্রধানগণ সন্ন্যাসী এবং ইংরেজ উভয়কেই কর প্রদানে অসমর্থ হয়ে পড়ে। উপরন্তু ফসলহানি, দুর্ভিক্ষ যাতে প্রায় এক কোটি মানুষ প্রাণ হারায় যা তৎকালীন বাংলার মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, সমস্যাকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয় কারণ আবাদী জমির বেশিরভাগ থেকে যায় ফসলশূণ্য ।১৭৭১ সালে, ১৫০ জন ফকিরকে হত্যা করা হয় দৃশ্যত বিনা কারণে। এটি ছিল অনেকগুলো কারণের একটি যা ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং এ ক্ষোভ পরবর্তীকালে রূপ নেয় সংঘাতে বিশেষত নাটোরে, রংপুরে যা এখন আধুনিক বাংলাদেশের অন্তর্গত। যদিও কিছু আধুনিক ইতিহাসবিদ মনে করেন আন্দোলনটি কখনোই জনপ্রিয় হয়নি।অন্য দুটি আন্দোলন ছিল হিন্দু সন্ন্যাসীদের একটি অংশ দসনমি নাগা সন্ন্যাসীদের, যারা একইভাবে তীর্থ ভ্রমণের পাশাপাশি অর্থ ধার দেয়ার সুযোগ কাজে লাগাত। ব্রিটিশদের কাছে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সন্ন্যাসীরা ছিল লুটেরা। এদেরকে কোম্পানীর প্রাপ্য অর্থে ভাগ বসানো এবং এমনকি সম্ভব হলে বাংলায় প্রবেশ ঠেকাতে তারা ছিল সদা তত্পর। তাদের কাছে ভ্রাম্যমান মানুষের এই বিশাল স্রোত সম্ভাব্য হুমকি বলে মনে হত।সন্ন্যাসী ও কোম্পানীর মধ্যে সংঘর্ষআঠারো শতকের শেষের তিন দশক জুড়ে যখনই কোম্পানীর সৈন্যরা সন্ন্যাসী এবং ফকিরদের অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রদেশে বাধা দেয়া হয়েছে তখনই ভয়ানক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে সব সময় ই যে কোম্পানীর সৈন্যরা বিজয়ী ছিল তা নয়। বেশিরভাগ সংঘর্ষের তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে দুর্ভিক্ষের পরবর্তী বছরগুলোতে। কিন্তু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ১৮০২সাল পর্যন্ত, যদিও তুলনামূলকভাবে কিছুটা অনিয়মিতভাবে। এমন কি উন্নততর প্রশিক্ষণ সুবিধা ও সৈন্য সম্ভার থাকা সত্ত্বেও কোম্পানী ভ্রাম্যমান সন্ন্যাসীদের সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণ প্রতিহত করতে সমর্থ ছিল না। এর কারণ মূলত পাহাড়ী এবং জঙ্গল আচ্ছাদিত জেলাজলপাগুড়ি, মেদিনীপুর এবং বীরভূমে কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণ ছিল দুর্বল।ঐতিহাসিক তাৎপর্যবাংলার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহতে ধারাবাহিকভাবে যেবিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে তার মধ্যে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ প্রথম। এছাড়া ১৭৯৯ সালের চুয়াড় বিদ্রোহ ১৮৩১ ও ১৮৩২ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ উল্লেখযোগ্য। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া কি তা বিতর্ক সাপেক্ষ। সম্ভবত এর সর্বোত্তম প্রভাব খুঁজে পাওয়া যাবে সেই সময়কার সাহিত্যে বিশেষত ভারতের প্রথম আধুনিক সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়রচিত বাংলা উপন্যাস আনন্দমঠে। উপন্যাসটি থেকে সংগ্রহীত বন্দে মাতরম গানটি তখন ভারতের জাতীয় গীত হিসেবে ঘোষিত হয়। (এটি ভারতের এখনকার জাতীয় সঙ্গীত নয়।)

Comments

Popular posts from this blog

Rumpa bidroho

রুম্পা বিদ্রোহদক্ষিণ ভারতের গোদাবরী অঞ্চলের রুম্পা আদিবাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ(১৮৭৮-১৮৮০)উনবিংশ শতকের সপ্তম দশকে মাদ্রাজ প্রদেশ জুড়ে প্রবল দুর্ভিক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষ প্রান হারান। ১৮৭৬ এর ২৩ শে নভেম্বর অমৃত বাজার পত্রিকা এই দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে বৃটিশ শাসকের শোষন, উদাসীনতাকে দায়ী করেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতাবাসীর কাছে দুর্ভিক্ষপীড়িতমানুষদের সাহায্যার্থে অর্থদানের আবেদন করলেও বিশেষ সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ভেতরেই উপুর্যপরি শোষন, বনাঞ্চল সংক্রান্ত বাধানিষেধ ও করের বোঝা দক্ষিণ ভারতে পর্বত-অরন্যচারীরুম্পা আদিবাসীদের ভেতর তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।রুম্পা সম্প্রদায় ছিল গোষ্ঠীমূলক। সমাজে সব কাজই একত্রিত সিদ্ধান্তে হতো। সুতরাং সকলেই মিলিতভাবে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়। এদের প্রধান নেতা ছিলেন চান্দ্রিয়া। লিংগম রেড্ডি, থুমন ধোরা প্রমুখ অন্যান্য নেতারাও বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। তারা থানা আক্রমন, অগ্নিসংযোগ, সরকারী কর্মচারীদের হত্যা ও ভদ্রাচলম, বিশাখাপত্তনম তথা পূর্ব গোদাবরী অঞ্চলে নিজেদের অধিকার কায়েম করলে সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর সাথে খন্ডযুদ্ধ হয়, উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র ও স...

Rajput history

ইতিহাসের পথ ধরে চলুন ফিরে যাই ১৭৩০ সালে। পশ্চিম রাজস্থানের মাড়োয়াড় অঞ্চলের খেজার্লি গ্রামে। আমরা ইতিহাসে পড়েছি চিরকালই রাজস্থান বিখ্যাত ছিল যুদ্ধবিগ্রহ, দখল ও রক্তপাতের জন্য। কিন্তু যেটা ইতিহাসে নেই তা হল প্রকৃতি ও জীবজগৎ বাঁচিয়ে নিজেরা বেঁচে থাকার এক জীবনদর্শনও শিখিয়েছে জলহীন এই রাজপুতনা। এই হিংসার দুনিয়ায় একটি ব্যতিক্রমের মতো রয়েছে বিষ্ণোই সম্প্রদায় যারা আজও প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে বাঁচায় বিশ্বাসী। লুন্ঠন, কেড়ে খাওয়া বা ফসলের জন্য রাজ্যবিস্তারের পরম্পরার উল্টোপথে হেঁটে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে নিজেরা বাঁচার দর্শনে বিশ্বাস করাবিষ্ণোই সম্প্রদায় গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংসের পথে বোধহয় পৃথিবীতে প্রথমবার (ভারতে তো বটেই) রুখে দাঁড়িয়েছিল।আগে দেখে নেওয়া যাক কারা এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। কথিত আছে, রাজস্থানের পিপাসার গ্রামে ১৪৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাম্বেশ্বর নামে এক ব্যক্তি। তিনিই পরবর্তীকাল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। বিষ্ণুর উপাসনা করতেন জাম্বেশ্বর। যে কারণে সম্প্রদায়ের নাম হয় বিষ্ণোই।গুরু জাম্বেশ্বর তার ভক্তদের বলেছিলেন, প্রকৃতিকে বাঁচানোর কথা। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে যে পশু-পাখি-গাছপালারও প্...

Gilgamas

পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেস সুমেরিও সভ্যতায় গড়ে ওঠা সমাজে,আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে,এক অনামি কবির হাতে কিউনিফর্ম ভাষায় রচিত হয় গিলগামেস মহাকাব্য। যেকোন মহাকাব্যই একটি সমাজ জীবনের পরিপ্রক্ষিতে রচিত হয়েছে। বহু বছর ধরে কাহিনীগুলি মানুষের মুখে মুখে বাহিত হতে থাকে। লিখিত আকারের মধ্যেও এর মূল চরিত্রগুলি এক থাকলেও,সময়ভেদে এবং অন্চলভেদে কাহিনীর মধ্যে কিছু কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যদিও মূল কাঠামোর কোন পরিবর্তন হয় না। যে সমাজকে কেন্দ্র করে কাহিনী গড়ে ওঠে, তার স্বরূপটি খুঁজে পেতে তাই অসুবিধা হয় না। গিলগামেসের কাহিনীও ঠিক এরকমই একটি।সর্বপ্রথম ব্রিটিস মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে অস্টিন হেনরি লেয়ার্ড, ১৮৫০ সাল নাগাদ, বর্তমান ইরাকে খনন কার্য চালিয়ে প্রাচীন সুমেরিও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার করেন। তিনি কিউনিফর্ম ভাষায় লিখিত প্রায় ২০,০০০ মাটির ট্যাবলেট বা টালি ব্রিটিস মিউজিয়ামে পাঠান। শুরু হয় অ্যাসিরিওলজির উপর গবেষনা। কিউনিফর্মভাষার পাঠোদ্ধারের কাজ। পরে আরো অনেক উৎস থেকে প্রায় ৭৫,০০০ এই ধরনের ট্যাবলেট ম্যানিস্ক্রিপ্টউদ্ধার হয়। যার মধ্যে অনেকগুলিই ভাঙা-চোরা। কিউনিফর্ম ভাষা পড়তে পারে হাতে ...