Skip to main content

captain philip gonzalez

ফেলিপ গন্জালেজ যখন ভাসতে ভাসতে প্রশান্তের দক্ষিণে ইস্টার দ্বীপে পৌঁছালেন ততক্ষণে তাঁর চোখ কপালে উঠে গেছে। সারি সারি পাথরের মানুষ যেনো কূলে দাঁড়িয়ে মাথা তুলে দেখছে তাঁদের জাহাজ! আতঙ্ক ঘিরে ধরলো ডেকে দাঁড়ানো সব নাবিককে, নোঙরের আগেই....সালটা সতেরোশো সত্তর। আমাদের পলাশীর যুদ্ধের তেরো বছর পর। দ্বিতীয়বারের মতো কোনো বিদেশী জাহাজ ভিড়লো ইস্টার দ্বীপের কূলে।দুটি স্প্যানিশ জাহাজ- সান লরেন্জো আর সান্তা রোজালিয়া। দুটোই ছিলো ক্যাপ্টেন ফেলিপ গোন্জালেজের অধীনে।.ইস্টার দ্বীপের কূলব্যাপী দাঁড়ানো শয়ে শয়ে পাথরের বিশাল মূর্তি গুলো তখনই ভালোভাবে নজরে আসে স্প্যানিশদের।.তীরবর্তী সবকটি মূর্তির মুখ ছিলো সাগরের দিকে ঘোরানো। যেনো একসাথে পাহারা দিচ্ছে দ্বীপকে। যাচাই করছে কে আসলো কে গেলো।.প্রতিটা মূর্তি ছিলো পাথরের তৈরী। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা যায় পাথরগুলো আনা হয়েছিলো দ্বীপের মধ্যবর্তী 'রানো রারাকু' (Rano Raraku) নামের এক আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে। অর্থাৎ আগ্নেয় শিলারতৈরি সব।.তাছাড়া একেকটা মূর্তি প্রায় বারো থেকে তেরো ফুট লম্বা আর ওজন প্রায় বারো টন। অর্থাৎ উচ্চতায় দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ আর ওজনে প্রায় দুইশোজন মানুষের সমান!.এই মূর্তিগুলো নিয়ে এরপর শুরু হলো জব্বর গবেষণা। বাঘা বাঘা আর্কিওলজিস্ট, খননবিদ, ইন্জিনিয়ার, রিসার্চাররা ভীড় করলেন দ্বীপে।.সম্মিলিত খোঁজখবরে জানা যায় বারোশো সালের দিকে পলিনেশীয় আদিবাসীরা ভাসতে ভাসতে আশ্রয় নেয় এই দ্বীপে। দ্বীপটাকে তারা ডাকতো রাপা নুই- তাদের ভাষায় দেয়া নাম।নিজেদের মৃত পূর্বপুরুষ দের আদলেই নাকি তারা বানিয়েছিলো এই বিশাল বিশাল মূর্তিগুলো। তাদের ধারণা ছিলো এই মূর্তিগুলো তাদের সমুদ্রের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবে!.কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে আস্তে আস্তে বিলুপ্তির মুখে এসে দাঁড়ায় এই দ্বীপের আদিবাসী রা। অনেকেই পাড়ি জমায় আশপাশের দ্বীপে। ধীরে ধীরে বৃক্ষশূন্য প্রাণীশূন্য হয়ে পড়ে পুরো দ্বীপ।অবশেষে ইউরোপিয়ানরা পা রাখার পর একপ্রকার নিঃশেষই হয়ে গেলো স্থানীয় দ্বীপবাসী রা।.অনেক গবেষণা খোঁড়াখুড়ি চললেও এখনো জানা যায়নি অনেক প্রশ্নের উত্তর....কোনোরকম আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই কিভাবে প্রায় নয়শোর মতো মূর্তি বানানোর কাজ করলো পলিনেশীয়রা?.আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে মাইলের পর মাইল বয়ে কিভাবে মূর্তিগুলো নিয়ে আসলো দ্বীপের কূলে? যেখানে প্রতিটি মূর্তির ওজন দশ টনের বেশি!.মূর্তিগুলোর পা নেই কেনো? মাথা এতো অস্বাভাবিক বড়ই বা কেনো? এই অদ্ভুত আকৃতির কারণ কী?.পুরো দ্বীপে কোনো বড় গাছ বা প্রাণী নেই কেনো? কোন অভিশাপে হারিয়ে গেলো তারা?.এত এত কেনোর উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছেন রিসার্চাররা। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মূর্তি নাড়াতে বা সড়াতে গিয়েই গলদঘর্ম হয়েছেন ইন্জিনিয়াররা!তাই প্রশ্ন জাগে আজ হতে আট শতাব্দী আগের সেই একাকী জনবর্জিত দ্বীপে কিভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলো দ্বীপবাসী রা?.এই প্রশ্নের উত্তর আজও মিলেনি। তবে বিজ্ঞানের কাছে বিশ্রাম বলতে কোনো শব্দ নেই।হয়তো অদূর ভবিষ্যতে উত্তর মিলবে সব রহস্যের।.ততদিন পর্যন্ত চিলির অধীনস্থ প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে ছোট্ট এই রাপা নুই ওরফে ইস্টার দ্বীপ মানুষের কাছে রহস্য হয়েই থাকুক।যেমনটা রহস্য হয়ে আছে তার অধিবাসী শয়ে শয়ে পাথরের নীরবপাহারাদার আর তাদের হারিয়ে যাওয়া স্রষ্টারা!

Comments

Popular posts from this blog

Rumpa bidroho

রুম্পা বিদ্রোহদক্ষিণ ভারতের গোদাবরী অঞ্চলের রুম্পা আদিবাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ(১৮৭৮-১৮৮০)উনবিংশ শতকের সপ্তম দশকে মাদ্রাজ প্রদেশ জুড়ে প্রবল দুর্ভিক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষ প্রান হারান। ১৮৭৬ এর ২৩ শে নভেম্বর অমৃত বাজার পত্রিকা এই দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে বৃটিশ শাসকের শোষন, উদাসীনতাকে দায়ী করেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতাবাসীর কাছে দুর্ভিক্ষপীড়িতমানুষদের সাহায্যার্থে অর্থদানের আবেদন করলেও বিশেষ সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ভেতরেই উপুর্যপরি শোষন, বনাঞ্চল সংক্রান্ত বাধানিষেধ ও করের বোঝা দক্ষিণ ভারতে পর্বত-অরন্যচারীরুম্পা আদিবাসীদের ভেতর তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।রুম্পা সম্প্রদায় ছিল গোষ্ঠীমূলক। সমাজে সব কাজই একত্রিত সিদ্ধান্তে হতো। সুতরাং সকলেই মিলিতভাবে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়। এদের প্রধান নেতা ছিলেন চান্দ্রিয়া। লিংগম রেড্ডি, থুমন ধোরা প্রমুখ অন্যান্য নেতারাও বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। তারা থানা আক্রমন, অগ্নিসংযোগ, সরকারী কর্মচারীদের হত্যা ও ভদ্রাচলম, বিশাখাপত্তনম তথা পূর্ব গোদাবরী অঞ্চলে নিজেদের অধিকার কায়েম করলে সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর সাথে খন্ডযুদ্ধ হয়, উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র ও স...

Rajput history

ইতিহাসের পথ ধরে চলুন ফিরে যাই ১৭৩০ সালে। পশ্চিম রাজস্থানের মাড়োয়াড় অঞ্চলের খেজার্লি গ্রামে। আমরা ইতিহাসে পড়েছি চিরকালই রাজস্থান বিখ্যাত ছিল যুদ্ধবিগ্রহ, দখল ও রক্তপাতের জন্য। কিন্তু যেটা ইতিহাসে নেই তা হল প্রকৃতি ও জীবজগৎ বাঁচিয়ে নিজেরা বেঁচে থাকার এক জীবনদর্শনও শিখিয়েছে জলহীন এই রাজপুতনা। এই হিংসার দুনিয়ায় একটি ব্যতিক্রমের মতো রয়েছে বিষ্ণোই সম্প্রদায় যারা আজও প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে বাঁচায় বিশ্বাসী। লুন্ঠন, কেড়ে খাওয়া বা ফসলের জন্য রাজ্যবিস্তারের পরম্পরার উল্টোপথে হেঁটে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে নিজেরা বাঁচার দর্শনে বিশ্বাস করাবিষ্ণোই সম্প্রদায় গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংসের পথে বোধহয় পৃথিবীতে প্রথমবার (ভারতে তো বটেই) রুখে দাঁড়িয়েছিল।আগে দেখে নেওয়া যাক কারা এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। কথিত আছে, রাজস্থানের পিপাসার গ্রামে ১৪৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাম্বেশ্বর নামে এক ব্যক্তি। তিনিই পরবর্তীকাল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। বিষ্ণুর উপাসনা করতেন জাম্বেশ্বর। যে কারণে সম্প্রদায়ের নাম হয় বিষ্ণোই।গুরু জাম্বেশ্বর তার ভক্তদের বলেছিলেন, প্রকৃতিকে বাঁচানোর কথা। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে যে পশু-পাখি-গাছপালারও প্...

Gilgamas

পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেস সুমেরিও সভ্যতায় গড়ে ওঠা সমাজে,আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে,এক অনামি কবির হাতে কিউনিফর্ম ভাষায় রচিত হয় গিলগামেস মহাকাব্য। যেকোন মহাকাব্যই একটি সমাজ জীবনের পরিপ্রক্ষিতে রচিত হয়েছে। বহু বছর ধরে কাহিনীগুলি মানুষের মুখে মুখে বাহিত হতে থাকে। লিখিত আকারের মধ্যেও এর মূল চরিত্রগুলি এক থাকলেও,সময়ভেদে এবং অন্চলভেদে কাহিনীর মধ্যে কিছু কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যদিও মূল কাঠামোর কোন পরিবর্তন হয় না। যে সমাজকে কেন্দ্র করে কাহিনী গড়ে ওঠে, তার স্বরূপটি খুঁজে পেতে তাই অসুবিধা হয় না। গিলগামেসের কাহিনীও ঠিক এরকমই একটি।সর্বপ্রথম ব্রিটিস মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে অস্টিন হেনরি লেয়ার্ড, ১৮৫০ সাল নাগাদ, বর্তমান ইরাকে খনন কার্য চালিয়ে প্রাচীন সুমেরিও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার করেন। তিনি কিউনিফর্ম ভাষায় লিখিত প্রায় ২০,০০০ মাটির ট্যাবলেট বা টালি ব্রিটিস মিউজিয়ামে পাঠান। শুরু হয় অ্যাসিরিওলজির উপর গবেষনা। কিউনিফর্মভাষার পাঠোদ্ধারের কাজ। পরে আরো অনেক উৎস থেকে প্রায় ৭৫,০০০ এই ধরনের ট্যাবলেট ম্যানিস্ক্রিপ্টউদ্ধার হয়। যার মধ্যে অনেকগুলিই ভাঙা-চোরা। কিউনিফর্ম ভাষা পড়তে পারে হাতে ...