ভারত সভা ভবনউনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ।১৮৫৭এর বিদ্রোহ হয়ে গেছে। ভারত তখন ক্ষুদ্র স্বার্থ, প্রাদেশিকতা, ধর্মীয় বিভেদের জালে আবদ্ধ। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশের শোষণ ফাঁস আরও দৃঢ় হয়ে বসছে ভারতের গলায়। এইশোষণ থেকে মুক্তি পেতে গড়ে উঠছে জমিদার সভা, রায়ত সভা, ইন্ডিয়া লিগের মতো প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের মধ্যে কোন একতা নেই, নেই সামঞ্জস্য। আবার অন্যদিকে দ্বি-জাতিতত্বেরচক্রান্তে ধর্মীয় বিভাজনও বাড়ছে।এমন সময় ভারতের আকাশে উদ্ভব হোল এক নক্ষত্রের। জাতীয়তাবাদের বিকাশ পুরুষ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যিনি অনুভব করলেন ভারতকে বাঁচাতেগেলে চাই এক মিলিত প্রচেষ্টা। বিভেদ ভুলে একত্রিত করতে হবে সারা ভারতের সব প্রতিবাদী কণ্ঠকে। বিকশিত করতে হবে জাতীয়তাবাদকে। বাঙালি বিহারী মারাঠি নয়, হিন্দু মুসলিম জৈন শিখ নয়। হতে হবে ভারতীয়। আর তার জন্য গড়ে তুলতে হবে একটি সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক সংগঠন।সেই ভাবনার ফসল হিসাবে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জুলাই প্রতিষ্ঠিত হোল ভারতসভা। সুরেন্দ্রনাথ সহযোগী হিসাবে পেলেন আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রীদের মতো মানুষদের। এগিয়ে চলল জাতীয়তাবাদের রথ। সিভিল সার্ভিসপরীক্ষার বয়সসীমা বৃদ্ধি,রিপনের আইন সচিব ইলবারট এর বিচারব্যবস্থায় ভারতীয় বিচারকদের শ্বেতাঙ্গদের বিচার করার অধিকার দিয়ে আনা ইলবারট বিল পাস করার দাবিতে কলকাতা কাঁপিয়ে দিলো তারা। অস্ত্র আইন, নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রন আইন,সংবাদপত্র আইনের বিরুদ্ধে ঝড় তুলল ভারতসভা। ভারতের জাতীয়তাবাদে শুরু হোল এক নতুন অধ্যায়। যার থেকে প্রেরনা পেয়ে গড়ে উঠলো ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। তারপর বাকিটা ইতিহাস।জাতীয় কংগ্রেসের আঁতুড়ঘর,ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ঐতিহ্যশালী সেই ভারতসভা হারিয়েছে তার গৌরব। ইতিহাস ভুলেছে তাকে। তবু আজো কলকাতার বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রীটে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত সেই ভবন। কিছু শুকনো মালা তার হারানো গৌরবের মতোই ঝুলে আছেতার দরজায়।তবু আজো ওই সিঁড়িতে পা রাখলে, দরজার সামনে দাঁড়ালে মনটা ফিরে যায় ভারত ইতিহাসের সেই অগ্নিযুগে। একা একা দাঁড়িয়ে রইলাম বহু ইতিহাস মাখা সেই দরজার সামনে। প্রনাম জানালাম জাতীয়তাবাদের অগ্রদূতদের।বেঁচে থাকো ভারতসভা বুকে নিয়ে গৌরবের ইতিহাস।
রুম্পা বিদ্রোহদক্ষিণ ভারতের গোদাবরী অঞ্চলের রুম্পা আদিবাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ(১৮৭৮-১৮৮০)উনবিংশ শতকের সপ্তম দশকে মাদ্রাজ প্রদেশ জুড়ে প্রবল দুর্ভিক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষ প্রান হারান। ১৮৭৬ এর ২৩ শে নভেম্বর অমৃত বাজার পত্রিকা এই দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে বৃটিশ শাসকের শোষন, উদাসীনতাকে দায়ী করেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতাবাসীর কাছে দুর্ভিক্ষপীড়িতমানুষদের সাহায্যার্থে অর্থদানের আবেদন করলেও বিশেষ সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ভেতরেই উপুর্যপরি শোষন, বনাঞ্চল সংক্রান্ত বাধানিষেধ ও করের বোঝা দক্ষিণ ভারতে পর্বত-অরন্যচারীরুম্পা আদিবাসীদের ভেতর তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।রুম্পা সম্প্রদায় ছিল গোষ্ঠীমূলক। সমাজে সব কাজই একত্রিত সিদ্ধান্তে হতো। সুতরাং সকলেই মিলিতভাবে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়। এদের প্রধান নেতা ছিলেন চান্দ্রিয়া। লিংগম রেড্ডি, থুমন ধোরা প্রমুখ অন্যান্য নেতারাও বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। তারা থানা আক্রমন, অগ্নিসংযোগ, সরকারী কর্মচারীদের হত্যা ও ভদ্রাচলম, বিশাখাপত্তনম তথা পূর্ব গোদাবরী অঞ্চলে নিজেদের অধিকার কায়েম করলে সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর সাথে খন্ডযুদ্ধ হয়, উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র ও স...
Comments
Post a Comment