পুরানো সেই দিনের কথা: বান্দার দেউল, বান্দা, পুরুলিয়া জেলা। ১৮৭২ সালে জোসেফ ডেভিড বেগলারের তোলা ছবি।● দেউলের বর্ণনা: বান্দা পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর শহর থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল।দেউলটি ১৪ফুট × ১৪ ফুট × ৭২ ফুট আয়তনের বর্গক্ষেত্রাকারএকটি রেখদেউল। দেউলের নিম্নতলের চত্বর আনুমানিক দেড়শ ফুট চওড়া ও আড়াইশো ফুট লম্বা। চত্বরের পূর্ব দিকে পাথর দিয়ে বাঁধানো সিঁড়ি ও উত্তরদিকে পাথরের স্তম্ভ হেলানো অবস্থায় বর্তমান। দেউলের সামনের দিকে আঙ্গিনায় আনুমানিক কুড়ি ফুটের একটি মন্ডপ রয়েছে, যার সামনের দিকে পাথরের স্তম্ভ বর্তমান। দেউলের পশ্চিম প্রান্তে আনুমানিক চার ফুট চওড়া আঙ্গিনার প্রবেশ পথ রয়েছে। উত্তরদিকে মূল দেউলের প্রবেশ পথ রয়েছে। দেউলের বেরিয়ে থাকা পাথরের রঙ খয়েরি ও ভেতরের সমান্তরাল পাথর বাদামী ধূসর বর্ণের। দেউলের পূর্ব দেওয়ালে পশ্চিমদিকে মুখ করে আনুমানিক দেড় ফুট উচ্চতার একটি পূর্ণাঙ্গ মকর মূর্তি বর্তমান এবং উপরের দিকে লতা, পাতা, ফুল ও একটি পাখির চিত্র বর্তমান। দেউলের তিন দেওয়ালে তিন ফুট চার ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ও দুই ফুট প্রস্থের তিনটি কুলুঙ্গী বর্তমান। মন্দিরের চূড়ায় একটি শতদল পদ্মের ভাস্কর্য বর্তমান। দেউলের তিন ফুট প্রস্থ ও সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার প্রবেশ পথ বর্তমান। দেউলকক্ষের ভেতরে পূর্ব ও পশ্চিম দেওয়াল ঘেঁষে সাড়ে ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের, তিন ফুট প্রস্থের ও আড়াই ফুট উচ্চতার একটি বেদীমূল বর্তমান। গর্ভগৃহের প্রবেশদ্বারের মাপ চৌদ্দ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও তেরো ইঞ্চি প্রস্থ।● বান্দার দেউলের ইতিহাস: আনুমানিক খ্রিস্টীয় নবম – দশম শতাব্দীতে নির্মিত হয় এই দেউলটি। এটি একটি ত্রিরথ, উত্তরমুখী, রেখ- দেউল। সম্পূর্ণত বেলে পাথর বা স্যান্ড স্টোনে নির্মিত।সেই যুগে এই দেউলটি নির্মাণ করেছিলেন জৈন শ্রেষ্ঠী ও ব্যাবসায়ীরা, যার বেশিরভাগই ছিলেন তামা/ পিতলের কারবারি। রাঢ় বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তখন জৈন রাজাদের শাসনে , জৈন ধর্ম প্রসার লাভ করে। বর্ধমান থেকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার অম্বিকানগর, বিশাল জায়গা জুড়ে জৈন সংস্কৃতি বিদ্যমান। সেইসময় অধিকাংশ ধনী ব্যাবসায়ীরা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেন।বর্তমানে দামোদর নদের নিকটবর্তী তেলকুপি গ্রাম , তখন ছিল তৈলকম্পি বন্দর।১৮৭৮ সালে, জোসেফ ডেভিড বেগলার দেউলটি নিয়ে লিখেছিলেন:"(Report of a Tour through the Bengal Provinces)-The front of the temple has three tiers of opening, first and lowest the entrance of the sanctum, leading as usual into a square chamber, roofed over with a flat roof, over this, a smaller opening leading into a small chamber, whose floor forms the roof of the sanctum."দেউলটি জৈনদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, তবে বর্তমানে আর এই গ্রামে জৈনদের দেখা মেলে না। পুরুলিয়ার একাধিক গ্রামে তাঁরা আছেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে; এখন তাঁদের পদবি মাজি, মণ্ডল, সরাক প্রভৃতি। দীর্ঘদিন এই গ্রামটি ছিল জনবসতিশূন্য। ১৯৫৭-য় তেলকুপি জলমগ্ন হলে সেখানকার মানুষজন এখানে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস আরম্ভ করেন। বর্তমানে এই দেউলটি সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত।
রুম্পা বিদ্রোহদক্ষিণ ভারতের গোদাবরী অঞ্চলের রুম্পা আদিবাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ(১৮৭৮-১৮৮০)উনবিংশ শতকের সপ্তম দশকে মাদ্রাজ প্রদেশ জুড়ে প্রবল দুর্ভিক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষ প্রান হারান। ১৮৭৬ এর ২৩ শে নভেম্বর অমৃত বাজার পত্রিকা এই দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে বৃটিশ শাসকের শোষন, উদাসীনতাকে দায়ী করেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতাবাসীর কাছে দুর্ভিক্ষপীড়িতমানুষদের সাহায্যার্থে অর্থদানের আবেদন করলেও বিশেষ সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ভেতরেই উপুর্যপরি শোষন, বনাঞ্চল সংক্রান্ত বাধানিষেধ ও করের বোঝা দক্ষিণ ভারতে পর্বত-অরন্যচারীরুম্পা আদিবাসীদের ভেতর তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।রুম্পা সম্প্রদায় ছিল গোষ্ঠীমূলক। সমাজে সব কাজই একত্রিত সিদ্ধান্তে হতো। সুতরাং সকলেই মিলিতভাবে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়। এদের প্রধান নেতা ছিলেন চান্দ্রিয়া। লিংগম রেড্ডি, থুমন ধোরা প্রমুখ অন্যান্য নেতারাও বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। তারা থানা আক্রমন, অগ্নিসংযোগ, সরকারী কর্মচারীদের হত্যা ও ভদ্রাচলম, বিশাখাপত্তনম তথা পূর্ব গোদাবরী অঞ্চলে নিজেদের অধিকার কায়েম করলে সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর সাথে খন্ডযুদ্ধ হয়, উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র ও স...
Comments
Post a Comment